প্রায়ই শোনা যায়, অভিভাবকরা অভিযোগ করেন যে, তাদের সন্তানরা ঠিক মতো পড়াশোনা করছে না। কোনও শিশু যদি তার বয়সি বাকি সহপাঠীর তুলনায় পিছিয়ে পড়ে, কিছু শিখতে বা বুঝতে দেরি লাগায়, তা হলে হয়তো অনেত অভিভাবকই বেশ বিরক্ত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু কখনও কখনও কোনও শিশু হয়তো অক্ষর চিনতে, শব্দ পড়তে এবং লিখতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ে। এটা সাধারণ নয়, স্বাভাবিকও নয়। একে বলে লার্নিং ডিজঅর্ডার। যাকে মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় ডিসলেক্সিয়া বলে।
ডিসলেক্সিয়া এক ধরনের মানসিক অবস্থা যা শিশুদের তথ্য বোঝার, উপলব্ধি এবং ব্যবহার করার ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এই সমস্যা শুধু সেই শিশুর পড়াশোনার উপরই প্রভাব ফেলে না, তার রোজকার কাজকর্ম যেমন— জুতোর ফিতে বাঁধা, শার্টের বোতাম তাড়াতাড়ি আটকানো ইত্যাদিকেও সমান ভাবে প্রভাবিত করে।
সম্প্রতি ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি’ জার্নালে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলন, ডিসলেক্সিয়াকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসাবে দেখা উচিত নয়। গবেষকদের মতে, ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবিষ্কার, উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আর পাঁচ জনের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে। গবেষকদের মতে, ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্বেষণ এবং কৌতূহলের বিশেষজ্ঞ। তাঁদের এই অনুসন্ধানমূলক আচরণ পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। মানুষের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডিসলেক্সিয়া কোনও মানসিক অসুস্থতা নয় । যে সব শিশু এতে আক্রান্ত, তাদের ‘ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাসিটি’ তথা মানসিক ক্ষমতা হয়তো গড় বা গড়ের চেয়ে বেশিই হয়। এই সব শিশু অসাধারণ বাগ্মী হয়।
ডিসলেক্সিয়ার কোনও নির্দিষ্ট বা নিশ্চিত চিকিৎসা নেই। যত তাড়াতাড়ি এর উপসর্গগুলি চিহ্নিত করা যাবে, ততটাই জরুরি ভিত্তিতে কোনও বিশেষজ্ঞ মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে । ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত কোনও শিশুর পড়া ও লেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় সঠিক শিক্ষাদানের কৌশল এবং নির্দেশ অনুসরণ করার মাধ্যমে । এই ধরনের শিশুদের সেই সব কাজ করায় উৎসাহ প্রদান করা উচিত, যা করতে তারা পারদর্শী।