ডিসলেক্সিয়ায় মূলত পড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া লেখা, বানান ও কথা বলায়ও সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এর মানে শিশুটির বুদ্ধিমত্তায় ঘাটতি রয়েছে এমন নয়। তবে এটি বুদ্ধিমত্তায় কোনো ধরনের প্রভাব ফেলে না।
কেন ডিসলেক্সিয়া হয়, সেটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কিছু জিনগত সমস্যা বা ব্রেনের কোনো পার্থক্য এ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে সাধারণত যে কারণগুলো বলা হয় :
পারিবারিক ইতিহাস : ডিসলেক্সিয়া পরিবারের মধ্যে কারও না কারও থাকে। যদি আপনার সন্তানও এ রোগে ভোগে তাহলে পরিবারের অন্য সদস্য বা আত্মীয়েরও ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় জানা গেছে, পড়া ও ভাষা-সংক্রান্ত সমস্যায় জিনের যোগ রয়েছে।
মস্তিষ্ক : ডিসলেক্সিয়া রয়েছে মানে এই নয় যে আপনার সন্তান বুদ্ধিহীন। বরং এর উল্টোটাই হয় আসলে। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত বহু লোকেরই সাধারণের চেয়ে বুদ্ধি বেশি। তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের চেয়ে আলাদা। ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের যে এলাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটি এক ব্যক্তির ডোমিন্যান্ট হেমিস্ফিয়ারে বেশ বড় আকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু যে বাচ্চাদের ডিসলেক্সিয়া রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ভাষা-সংক্রান্ত এলাকাটি ব্রেনের বাঁ ও ডান দুদিকেই সমান আকৃতির হয়ে থাকে।
ব্রেনের ভাষা-সংক্রান্ত এলাকা : ব্রেনের ভাষা-সংক্রান্ত এলাকাটি নির্দিষ্ট নিয়ম মতোই কাজ করে কিন্তু ডিসলেক্সিয়া থাকা একটি বাচ্চার ক্ষেত্রে একই রকম কাজ করে না, আর তাই এই বাচ্চারা ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে ব্রেনের বিভিন্ন এলাকা ব্যবহার করে। ব্রেনের এই নিউরোপ্লাস্টিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ঠিকমতো প্রশিক্ষণের সাহায্যে ব্রেনের কার্যকলাপে কিছুটা রূপান্তর ঘটিয়ে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যেতে পারে।
লক্ষণ
যদি আপনার সন্তানের বর্ণমালার অক্ষরগুলো চিনতে অসুবিধা হয়, অক্ষরের সঙ্গে শব্দ মেলাতে কষ্ট হয়, শব্দের সঙ্গে কথা মেশাতে অসুবিধা হয়, শব্দ উচ্চারণ করতে কঠিন সমস্যা হয়, নতুন শব্দ শিখতে অসুবিধা হয়, সমবয়সী অন্য শিশুদের চেয়ে সংক্ষিপ্ত শব্দভা-ার, গণনা শিখতে বা সপ্তাহের দিনগুলোর হিসাব ও অন্য সাধারণ শব্দের বিন্যাস শিখতে অসুবিধা, ছন্দ মেলাতে অসুবিধা, পড়া ও বানানে অসুবিধা, সঠিক ব্যাকরণ ব্যবহারে অসুবিধা, নতুন কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে কষ্ট হওয়া এবং স্মরণশক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করা, ক্রম এবং দিকচিহ্ন মেনে চলতে অসুবিধা হওয়া, জোরে পড়তে অসুবিধা হওয়া, ঠাট্টা, রসিকতা বা বাকপ্রণালি বুঝতে অসুবিধা, সময় সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করায় অসুবিধা, একটি ঘটনা বা গল্পকে গুছিয়ে বলতে অসুবিধা হওয়া, বিদেশি ভাষা শিখতে অসুবিধা হওয়া এবং বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় খারাপ ফল করা।
চিকিৎসা
শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা মিলে শিশুকে বিকল্প উপায়ে শেখানোতে সাহায্য করতে হবে। যেমন, শিশুকে ক্লাসের পড়া অডিও রেকর্ড করে শোনানো, ত্রিমাত্রিক অক্ষর ছুঁয়ে ও স্পর্শ করিয়ে অক্ষর চেনানো অথবা ছবি দেখিয়ে নতুন শব্দ শেখানো।
ফোনেটিক্স বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পড়তে শেখানো এবং উচ্চারণে সাহায্য করা।
একটি বিশেষ পরিকল্পনা মাফিক ছোট ছোট বিষয় তৈরি করে পড়তে উৎসাহ দেওয়া।
জোরে জোরে গল্প পড়ে শোনানো বা রেডিওতে গল্প শুনতে উৎসাহিত করা।
ডিসলেক্সিয়ার উপসর্গ দেখলে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র : মমপ্রেসো