কী ভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত কিনা? জানুন…

কী ভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত কিনা? জানুন…
দেরিতে কথা বলা, নতুন শব্দ শিখতে সমস্যা, রাইমিং গেমসে সমস্যা ইত্যাদি কমবয়সি বাচ্চাদের ডিসলেক্সিয়ার লক্ষণ। ডিসলেক্সিয়া এমন একটি সমস্যা যা ভাষাভিত্তিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে অক্ষমতা সৃষ্টি করে। এর অন্যান্য নানান লক্ষণও রয়েছে। ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত কিছু কিছু ব্যক্তির ফোনেমিক সচেতনতার অভাব দেখা দেয়।

হাইলাইটস:

  • ডিসলেক্সিয়া এমন একটি সমস্যা যা ভাষাভিত্তিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে অক্ষমতা সৃষ্টি করে।
  • এর অন্যান্য নানান লক্ষণও রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডিসলেক্সিয়া অ্যাসোসিয়েশনের মতে মোট জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ব্যক্তি এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
  • এর নিরাময় করা সম্ভব না-হলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ব্যক্তি কোন ধরনের ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি।

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ডিসলেক্সিয়া এমন একটি সমস্যা যা ভাষাভিত্তিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে অক্ষমতা সৃষ্টি করে। এর অন্যান্য নানান লক্ষণও রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডিসলেক্সিয়া অ্যাসোসিয়েশনের মতে মোট জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ব্যক্তি এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এর নিরাময় করা সম্ভব না-হলেও, চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ব্যক্তি কোন ধরনের ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত, তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি।

বয়সের ভিত্তিতে এর লক্ষণেও হেরফের দেখা যায়। দেরিতে কথা বলা, নতুন শব্দ শিখতে সমস্যা, রাইমিং গেমসে সমস্যা ইত্যাদি কমবয়সি বাচ্চাদের ডিসলেক্সিয়ার লক্ষণ। বাচ্চা স্কুলে যেতে শুরু করলে এ ধরনের ডিসলেক্সিয়ার লক্ষণ আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়।

এই বাচ্চারা বয়সের তুলনায় নীচু ক্লাসে পড়াশোনা চালাতে বাধ্য হয়, নতুন বাক্য তৈরি করতে, সঠিক শব্দ খুঁজে পেতেও সমস্যা দেখা দেয় এদের মধ্যে। শব্দ বলার অক্ষমতা বা অচেনা শব্দ উচ্চারণ করতে না-পারারা কারণে তারা জোরে জোরে পড়তে পারে না। সঠিক সময় চিকিৎসা না-করালে শিশু ভবিষ্যতে পড়াশোনা ও কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে পূর্ণ ভাবে অবহিত হতে পারবে না।

রিডিং স্পেশ্যালিস্ট ও মনোচিকিৎসকরা ব্যক্তির মধ্যে কোন ধরনের ডিসলেক্সিয়া রয়েছে, তা চিহ্নিত করতে পারেন। কোনও সংস্থাই ডিসলেক্সিয়ার উপ-প্রকারের কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে ডিসলেক্সিয়ার কোনও ‘প্রকার’ হয় না। এ বিষয় এখনও গবেষণা চলছে। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে চার উপ-প্রকারের ডিসলেক্সিয়া সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়—

ফোনোলজিক্যাল ডিসলেক্সিয়া বলতে কী বোঝায়?

ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত কিছু কিছু ব্যক্তির ফোনেমিক সচেতনতার অভাব দেখা দেয়। অর্থাৎ তাঁরা একটি শব্দের মধ্যে থাকা পৃথক পৃথক অক্ষরের উচ্চারণ বুঝতে এবং পরে সেই সমস্ত অক্ষর মিলিয়ে একটি শব্দ চিনতে পারেন না। কোনও শব্দকে সিলেবলসে ভাগ করা এঁদের পক্ষে কঠিন। ফলে অক্ষর ও শব্দকে তাদের উচ্চারণের সঙ্গে যুক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

সারফেস ডিসলেক্সিয়া বলতে কী বোঝায়?

কোনও শব্দের বানান এবং তার উচ্চারণের মধ্যে পার্থক্য থাকলে সেই শব্দ চিনে তা পড়তে না-পারাকে সারফেস ডিসলেক্সিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। yatch, thorough, subtle-এর মতো শব্দগুলি উচ্চারণ করা সারফেস ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে কঠিন।

সারফেস ডিসলেক্সিয়াকে আবার ভিসুয়াল ডিসলেক্সিয়াও বলা হয়। কারণ এই ডিসলেক্সিয়া থাকলে ব্যক্তি কোনও শব্দ দেখেও তা চিনতে পারে না। তবে মনে রাখবেন, ডিসলেক্সিয়া কোনও ভাবেই চোখ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যার সঙ্গে সাধারণত জড়িয়ে থাকে না। বরং ব্যক্তির মস্তিষ্ক যে ভাবে শব্দ, সংখ্যা ও অক্ষর চিনে থাকে, তার জন্য এমন ডিসলেক্সিয়া দেখা দেয়।

তবে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা মাঝেমধ্যে ডিসলেক্সিয়ার মিমিক্রি করে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা ডিসলেক্সিয়ার চিকিৎসার শুরুর পূর্বে আরও কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত হয়ে থাকেন।

র‌্যাপিড অটোমেটিক নেমিং ডিসলেক্সিয়া বলতে কী বোঝায়?

কোনও ব্যক্তি এ ধরনের ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত থাকলে তাঁরা সহজে কোনও অক্ষর বা সংখ্যা চিনে উঠতে পারেন না। ব্যক্তির মস্তিষ্ক ওই অক্ষর বা সংখ্যা চিনতে অনেক বেশি সময় নিয়ে থাকে, যে কারণে ব্যক্তি ধীরে ধীরে পড়ে।

ডাবল ডেফিসিট ডিসলেক্সিয়া বলতে কী বোঝায়?

একের বেশি ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল নয়। যে দুধরনের ডিসলেক্সিয়ায় ব্যক্তি সাধারণত একসঙ্গে আক্রান্ত হতে পারে, তা হল ফোনোলজিক্যাল ডিসলেক্সিয়া এবং র‌্যাপিড নেমিং ডেফিসিট ডিসলেক্সিয়া। কোনও ব্যক্তির মধ্যে এই দুই ডিসলেক্সিয়া দেখা দিলে তখন সেই অবস্থাকে ডাবল ডেফিসিট ডিসলেক্সিয়া বলা হয়।

ডিসলেক্সিয়ার সঙ্গে পড়াশোনার অক্ষমতা সংক্রান্ত অন্যান্য কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে?

পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন অনেক অক্ষমতা আছে, যা ডিসলেক্সিয়ার সঙ্গে দেখা যায়। কিন্তু এগুলিকে ডিসলেক্সিয়া বলা চলে না। যেমন একটি ব্যক্তি ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি

১. ডিসক্যালকুলিয়া বা গণিতে সমস্যা

২. ডিসগ্রাফয়া বা লিখতে সমস্যা

৩. লেফ্ট-রাইট ডিস অর্ডার বা ডান ও বাঁ দিক চিনতে সমস্যা হতে পারে।

এই সমস্যাগুলির পিছনে দায়ী কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন গবেষককরা। তবে সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে যে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই সমস্যার উৎস নিউরোলজিক্যাল কারণে হতে পারে।

গণিতের ডিসলেক্সিয়া বলে কী কিছু আছে?

এমন কোনও ডিসলেক্সিয়া নেই। সকলে যাকে গণিতের ডিসলেক্সিয়া বলে থাকেন, সেটি আসলে ডিসক্যালকুলিয়া। কোনও ব্যক্তির সংখ্যা গোণার সমস্যাকে ডিসক্যালকুলিয়া বলা হয়ে থাকে। ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ডিসক্যালকুলিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু এটি ডিসলেক্সিয়ার কোনও প্রকার নয়। প্রায় ৩ থেকে ৬ শতাংশ শিশুদের এই ডিসঅর্ডার প্রভাবিত করে।

এর লক্ষণও ব্যক্তিবিশেষে পৃথক পৃথক হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তি সংখ্যা মনে রাখতে এবং সাজাতে বা সময় দেখতে পারে না। তবে ডিসলেক্সিয়ার ক্ষেত্রে যেখানে গণিত রয়েছে, তারা সেই স্থানই এড়িয়ে যান। অন্যন্য যে সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয়, তা হল—

১. শব্দের সমস্যা

২. সংখ্যা মনে রাখার সমস্যা

৩. টাকা ঠিকঠাক হিসেব করে রাখতে পারেন না এমন ব্যক্তি।

৪. পরিমাণ বুঝতে সমস্যা।

৫. ধনাত্মক ও ঋণাত্মক মূল্য বুঝতে অসুবিধা।

৬. সময় বুঝতে অসুবিধা (যেমন সপ্তাহের দিন।)

৭. চার্ট ও গ্রাফ অনুধাবন করতে সমস্যা।

ডিসক্যালুলিয়ার লক্ষণ চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে, কারণ বহু বাচ্চা ও বয়স্করা গণিতের নাম শোন মাত্রেই ভীত হয়ে পড়তে পারেন। তবে অভিভাবক ও শিক্ষকরা বাচ্চার বয়সের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন দেখে তা বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।

যেমন একজন প্রিস্কুলের বাচ্চার ডিসক্যালকুলিয়া থাকলে সে গুণতে পারবে না বা অন্যান্যরা গণনার যে ধারণা করতে পেরেছে, তা-ও তারা করতে পারবে না।

আবার উঁচু ক্লাসে ডিসক্যালকুলিয়ার লক্ষণ হতে পারে সাধারণ অঙ্ক করার অক্ষমতা। যেমন একটি শিশু ২+২= ৪ হয়, তা বুঝতে পারবে না।

অন্য দিকে আরও উঁচু ক্লাসের বাচ্চারা সাধারণ যোগ বা বিয়োগের জন্যও হাতে গুণে থাকে।

ডিসগ্রাফিয়া বলতে কী বোঝায়?

কোনও ব্যক্তির ডিসগ্রাফিয়া থাকলে তাঁর হাতের লেখায় নানান অনিয়ম দেখা দেবে। যেমন-

১. অক্ষর ও শব্দের মধ্যে অসমানুপাতিক দূরত্ব।

২. শব্দ হারিয়ে ফেলা।

৩. অক্ষর হারিয়ে ফেলা।

৪. বানানে সমস্যা।

৫. নানান আকার ও সাইজের শব্দ লেখা।

৬. দুষ্পাঠ্য হাতের লেখা।

ডান-বাঁ বিভ্রান্তি বলতে কী বোঝায়?

এ ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তি ডান ও বাঁয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। কোনও ব্যক্তির মধ্যে এই সমস্যা থাকলে, সে দিক নির্ধারণ করতে পারে না আবার ম্যাপও অনুসরণ করতে পারে না। একে মাঝেমধ্যে ডিরেকশনাল ডিসলেক্সিয়া বলা হয়ে থাকে, তবে এটি ঠিক নয়। যেমন ডিসলেক্সিয়ার সঙ্গে ডিসক্যালকুলিয়া দেখা গেলেও এটি ডিসলেক্সিয়ার কোনও ধরন নয়, তেমনই ডান ও বাঁয়ের মধ্যে বিভ্রান্তিও ডিসলেক্সিয়ার প্রকারভেদ নয়।

তবে একে পড়াশোনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে দেখা হয়—

১. ডিসলেক্সিয়া

২. ডিসক্যালকুলিয়া

৩. ডিসগ্রাফিয়া

৪. অমৌখিক শেখার অক্ষমতা, যা শারীরিক সমন্বয়, সামাজিক মেলামেশা এবং এক্সিকিউটিভ ফাংশানিংকে প্রভাবিত করতে পারে এই বিভ্রান্তি।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *