“সবার জীবনে প্রেম আসে, তাই তো সবাই ভালোবাসে” গানের কথার মতোই হয়তো সত্যিই প্রতিটি মানুষ কখনো না কখনো প্রেমে পড়েন। তবে কেউ কেউ আছেন যারা বিপরীত দিকে থাকা মানুষটি তার প্রেমে না পড়লেও একতরফভাবে ভালোবেসে যান। এই একতরফা প্রেমের উদাহরণ একেবারেই কম নয়। কিন্তু, কারো কারো ক্ষেত্রে এই একপাক্ষিক প্রেমের বিষয়টি আবার একটু অন্যরকম।
এটি এমন এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি তার সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি এমন কেউও তার প্রেমে পড়েছেন বলে ধরে নেন। এমনকি বিখ্যাত কোনো ব্যক্তিও তার প্রেমে পড়েছেন বলে তিনি ধরে নেন। আক্রান্ত ব্যক্তি এই ভালোবাসা সম্পর্কে এতটাই নিশ্চিত থাকেন যে, তিনি মনগড়া অনেক কথা খুব জোরালোভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়ক কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে বললে তিনি সেটি পারেন না।
এটিকে ডি ক্লেরামবল্ট সিন্ড্রোমও বলা হয়। তবে এই রোগটি যে সচারচার দেখা যায় তেমনটি নয়, এটি আসলে বিরল একটি রোগ; যা খুব অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
ইরোটোমেনিয়ায় আক্রান্তের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এটি কারো কারো ক্ষেত্রে নিজে থেকেই ঘটতে পারে। তবে এটি সাধারণত সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো অন্য মানসিক রোগের উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। এছাড়া, একাকিত্বে ভুগলে বা প্রেম ও দাম্পত্যে ধাক্কা খেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগতে থাকা মানুষও এই ধরনের কল্পনাপ্রসূত বিষয়ে ভরসা করতে পারেন বলে মত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
এছাড়া, আত্মসম্মানবোধ তলানিতে থাকলেও এই একতরফা অধিকারবোধ আসতে পারে ৷ এমনকি, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত নারীদের মধ্যে ইরোটোমেনিয়ার প্রবণতা একটু বেশি। তবে, পুরুষদেরও এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিকালের পাশাপাশি মধ্যবয়সেও এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
ইরোটোমেনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। কিন্তু, যখন কোনো ব্যক্তি প্রাসঙ্গিক কিংবা অপ্রাসঙ্গিক যেকোনো আলোচনায় বারবারই তার প্রতি অন্যদের দুর্বলতা বা প্রেম নিবেদন কিংবা তাকে ঘিরে অন্যদের আবেগ সংক্রান্ত নানা কথা বলতে থাকেন; তখন সেটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যেতেই পারে। এমনকি, প্রাথমিকভাবে তিনি ইরোটোমেনিয়ায় আক্রান্ত বলেও ধরে নিতে পারেন।
ইরোটোমেনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ে এই রোগে ভালো উপকার মেলে। অধিকাংশ ইরোটোমেনিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) ব্যবহার করে থাকেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা।