অটিজম : শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা

অটিজম : শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যার নাম অটিজম। স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও বৃদ্ধির অস্বাভাবিকতার জন্য এ সমস্যা হয়ে থাকে। এতে আক্রান্ত হলে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ঘটলেও, মানসিকভাবে ততটা বেড়ে ওঠে না। এর ফলে শিশুর নানা রকম অসুবিধা তৈরি হয়। পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ, অস্পষ্ট উচ্চারণ কিংবা কথা না বলার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণত ছেলে বাচ্চাদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

 

* লক্ষণ ও উপসর্গ

▶ সমবয়সিদের সঙ্গে না মেশা, একা একা থাকার অভ্যাস।

▶ এক থেকে দেড় বছর বয়সের মধ্যে কোনো অর্থবহ শব্দ কিংবা অন্তত বা, দা, না ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ না করা।

▶ আচরণের পুনরাবৃত্তি, যেমন-ভিন্ন ভিন্ন খেলনা দিলেও খেলার ধরন একই।

▶ আই কন্ট্যাক্ট বা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারা।

▶ কথা বলায় জড়তা কিংবা না বলা।

▶ শিশুর ধৈর্য কম থাকা এবং দ্রুত মনোযোগ হারিয়ে ফেলা।

▶ হাত নেড়ে কোনো কিছু ইঙ্গিত না করা।

▶ দুই শব্দের বাক্য দুই বছর বয়সে তৈরি করতে না পারা।

▶ কিছু শব্দ বা বাক্য শিখে পরবর্তী সময়ে দ্রুত ভুলে যায়।

* অটিজমে কী করবেন

শিশুর অটিজমের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এর লক্ষণগুলো পরিবর্তনশীল। যা হালকা থেকে মাঝারি, মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণ ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর পূর্ণাঙ্গ নিরাময় সম্ভব নয়। অটিজম নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-বিহেভিয়ার থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি ইত্যাদি। আর এ পুরো প্রক্রিয়ায় ভালো ফল পেতে থেরাপিস্ট ও পরিবারের সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। অকুপেশনাল থেরাপিতে দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন-খাবার খাওয়া, জামাকাপড় পরিধান করা, চলাফেরা ও নিজেকে নিরাপদ রাখার কৌশল সম্পর্কে আক্রান্ত শিশুর বিকাশ লাভে সহযোগিতা করা হয়।

দেরিতে কথা বলা কিংবা কথা না বলা এবং ভাষা ও উচ্চারণগত সমস্যার ক্ষেত্রে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি খুব উপকারে আসে। আচার-আচরণ ও পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনে শিশুর বিকাশ ও দক্ষতা অর্জনে বিহেভিয়ার থেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও এডুকেশন থেরাপিসহ নানা থেরাপি অটিজমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত এ থেরাপি সেবাগুলো নিতে হয় এবং বয়স ও শিশুর উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে থেরাপির ধরন পরিবর্তন করা হয়।

এই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গ্লুটেইন-ফ্রি ও ক্যাসেইন-ফ্রি খাবার সহায়ক। ওমেগা থ্রি, ভিটামিন বি৬, বি১২, ভিটামিন ডি ও সি সাপ্লিমেন্টও উপকারী।

দ্রুত বহুমাত্রিক চিকিৎসাব্যবস্থা এ বাচ্চাদের সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

* অভিভাবকের জন্য করণীয়

▶ লক্ষণ গোপন করবেন না।

▶ হতাশ ও বিভ্রান্ত হবেন না।

▶ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

▶ নিজে প্রশিক্ষিত হোন এবং অন্যদের সচেতন করুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চেম্বার : ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল, ধানমন্ডি. ঢাকা।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *